বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আগামী ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত (মোট ৯২ দিন) সব ধরনের পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। এ সময় সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ ধরা, মধু সংগ্রহ এবং পর্যটন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান। খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন স্টেশনে ইতোমধ্যে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বনজীবীদের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বন বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের ২৫১ প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে, ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এ সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।
বনজীবীদের দুশ্চিন্তা: “সংসার কিভাবে চলবে?”
তবে এ নিষেধাজ্ঞায় উপকূলীয় এলাকার জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা চরম সংকটে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, বিকল্প কর্মসংস্থান কিংবা খাদ্য সহায়তা না থাকায় তিন মাসের নিষেধাজ্না বাস্তবজীবনে বড় ধরনের কষ্ট বয়ে আনবে।
কয়রার বনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন,
“সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই আমাদের সংসার চলে। এলাকায় তেমন কোনো কাজ নেই। এখন ভাবছি কীভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলবো।”
পাথরখালী গ্রামের জেলে শফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“সাগরে মাছ ধরার সময় জেলেদের সরকার সহায়তা দেয়, কিন্তু সুন্দরবনের জেলেরা কিছুই পায় না। অথচ আমরাও তো দেশের জন্য মাছ সংগ্রহ করি। বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি, সাহায্য না পেলে খুব কষ্ট হবে।”
সরকারি অবস্থান ও সহায়তার প্রস্তাব
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাহিদ বলেন,
“এ সময়ে পর্যটক ও বনজীবী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশ-পারমিট ইস্যু বন্ধ। বন্য প্রাণী শিকার ও অবৈধ আহরণ বন্ধে কঠোর টহল কার্যক্রম চালানো হবে।”
কয়রা উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এলাকায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৩,৫২৬ জন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা এর প্রায় তিনগুণ—কমপক্ষে ৫০ হাজার জেলে পরিবারের জীবিকা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন,
“অনেক প্রকৃত জেলের কার্ড নেই, ফলে তারা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত। যাচাই-বাছাই করে ভুয়া জেলেদের কার্ড বাতিল করে প্রকৃতদের আওতায় আনার কাজ চলছে।”
ডিএফও এজেডএম হাছানুর রহমান জানান,
“আমরা বনজীবীদের মাসে ৪০ কেজি চাল দেওয়ার প্রস্তাব করেছি এবং মৎস্য দপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি সরকারি সহায়তা দ্রুত কার্যকর হবে।”
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্ষা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা জরুরি হলেও স্থানীয় জীবিকার ওপর নির্ভরশীল হাজারো বনজীবীর জন্য এটি বড় ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রাষ্ট্রের দায়িত্ব যেমন আছে, তেমনি বনজীবীদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি দায়িত্ব।
শহীদ আলিফ আহম্মেদ সিয়াম-এর কবর জিয়ারত করলেন বাগেরহাটের জামায়াতের নেতৃবৃন্দ
গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বাগেরহাটে শহীদ পরিবারে সাক্ষাৎ ও কবর জিয়ারত কর্মসূচি
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার
আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার মধ্যেই নিহিত এতিম লালন-পালনের স্বার্থকতা - ধর্ম উপদেষ্টা