মার্কিন মধ্যস্থতায় গত শনিবার সন্ধ্যায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং কার্যকরের পর গোটা পাকিস্তান জুড়ে শুরু হয়েছে বিজয় আর আনন্দ উৎসব। গতকাল রোববারকে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছে ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানানোর দিন হিসেবে।
পাকিস্তানের জনগণ ও সরকার আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে তাদের বিজয়ী বীর সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দিয়েছেন ‘ভিক্টরি স্পিচ’। অন্যদিকে পরাজয়ের গ্লানি আর হতাশায় ডুবেছে ভারত। প্রচণ্ড চাপের মুখে এখন মোদি সরকার।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনার আগে ভারতের সব রাজনৈতিক দল দাঁড়িয়েছিল মোদি সরকারের পাশে। এখন বিরোধীরা সরব হয়ে জবাব চাইছেন মোদি সরকারের কাছে—কেন এমনটি হলো? সোশ্যাল মিডিয়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়। পাকিস্তান যখন বিজয়োল্লাস করছে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি-পরবর্তী আলোচনায় করণীয় ঠিক করতে মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যস্ত নরেন্দ্র মোদি। সব মিলিয়ে পরাজয়ের দুঃখে কাতর ভারত।
ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস অপারেশন সিঁদুর, এর ফলাফল এবং যুদ্ধবিরতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। শিব সেনাসহ কট্টরপন্থি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ক্ষুব্ধ জনগণ মোদি সরকারকে ‘গাদ্দার’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি এবং কাশ্মীরকে নতুন করে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করায় উদ্বিগ্ন ভারতের নীতিনির্ধারকরা। তারা প্রশ্ন করছেন, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মোদি সরকার কীভাবে মার্কিন মধ্যস্থতা মেনে নিল।
রাহুল গান্ধী চিঠিতে লিখেছেন, যুদ্ধবিরতি ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে সংসদের বিশেষ অধিবেশন জরুরি। রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খড়গেও একই দাবি জানিয়ে বলেছেন, পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড, অপারেশন সিঁদুর এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিশদ আলোচনা প্রয়োজন। কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথ প্রশ্ন তুলেছেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে দিলেন, তার জবাব দিতে হবে।
কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার জন্য, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় দেশে বসে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হচ্ছে। কাশ্মীরের আন্তর্জাতিকীকরণ তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
প্রভাবশালী কংগ্রেস এমপি মণীষ তেওয়ারি বলেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ নতুন নয়, কিন্তু এবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
শিব সেনা নেতা সঞ্চয় রাউত বলেন, ভারতের মাটিতে হিন্দুরা মারা গেল, আর মোদি সরকার শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকে ডাকল! তিনি অভিযোগ করেন, মোদি সরকার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে দেশের নারীদের সিঁদুর ও সম্মানকে অপমান করেছে এবং দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, জনগণ বদলা নিতে চেয়েছিল। করাচি, লাহোরে আঘাত হানার দৃশ্য দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, সরকার যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য। তিনি মোদিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, সাহস থাকলে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকুন।
জনপ্রিয় ইউটিউবার অভিসার শর্মা বলেন, বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে ভারত হেরে গেল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক ইস্যু বানিয়ে দিলেন, আর মোদি সরকার নীরব। তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী দেশ, কিন্তু ট্রাম্প পাকিস্তান ও ভারতকে সমমর্যাদায় দাঁড় করিয়ে দিলেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল তুরস্ক ও চীন—কিন্তু ভারতের পাশে কেবল ইসরাইল? এর জবাবও মোদি সরকারকে দিতে হবে।
যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী। তার এই বিবৃতি নিয়েও চলছে ট্রল। অনেকেই তাকে কাপুরুষ ও বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিচ্ছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কিংবা নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল কেউ এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। কেবল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে এখন টের পেয়েছে।
তবে রাজনাথের এই বক্তব্য নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে চলছে হাস্যরস। একজন লিখেছেন, “এই রাজনীতিবিদদের কারণেই আমাদের জওয়ানরা আজ মনোবল হারিয়ে ভেঙে পড়েছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইসরায়েল তাকে ‘হত্যার’ চেষ্টা করেছে
খাদ্যের জন্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করে গাজায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ-শিশুর লড়াই