২০২৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যু আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ওই বছর ৪,৮১৩ জন প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি। এই তথ্য প্রকাশ করেছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ)।
ঢাকায় ২৯ মে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে গবেষণাটি উপস্থাপন করে জানানো হয়—মারা যাওয়া শ্রমিকদের গড় বয়স মাত্র ৩৮ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে এই বয়স উন্নত দেশের নারীদের চেয়ে প্রায় ১০ বছর কম। অধিকাংশ নারী কর্মী কর্মজীবনের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন।
মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আড়াল?
আরএমএমআরইউ-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন,
“অনেক সময় মৃতদেহে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকলেও মৃত্যুর সনদে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ লেখা হয়। সরকারের উচিত প্রতিটি মৃত্যুতে পোস্টমর্টেম নিশ্চিত করা।”
গবেষণা বলছে, ৬৯% মৃত্যু 'স্বাভাবিক' আর ৩১% 'অস্বাভাবিক' হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে সৌদি আরবে আত্মহত্যার হার ২৪%, যা সর্বোচ্চ।
পরিবার বিশ্বাস করে না সনদের তথ্য
প্রায় ৪৮% পরিবার মনে করে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপন করা হয়েছে। বিশেষ করে খুন, আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনার মতো ঘটনার যথাযথ তদন্ত হয় না।বক্তারা অভিযোগ করেন, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণে মর্যাদাহীন আচরণ করা হয়। মরদেহ সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৮০% পরিবারকে।
রাষ্ট্রীয় দায়-দায়িত্বের প্রশ্ন
এই মৃত্যুর মিছিল শুধু পরিসংখ্যান নয়—এটি এক করুণ বাস্তবতা, যেখানে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীরা জীবনের শেষে রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও মানবিক অসম্মান পান।ড. তাসনিম বলেন,
“এত মানুষ কেন মরছেন, বিশেষ করে এত অল্প বয়সে? এর উত্তর আমরা পাচ্ছি না।”
এমন বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্য গবেষকরা পোস্টমর্টেম বাধ্যতামূলক করা, মরদেহ গ্রহণের প্রক্রিয়ায় মানবিকতা ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিটি মৃত্যুর সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।এখনই সময় রাষ্ট্রকে এ সংকট নিয়ে গভীরভাবে ভাবা ও কার্যকর নীতি গ্রহণের। কারণ, এই মৃত্যু শুধুই একজন শ্রমিকের নয়—এটি দেশের বিবেকেরও মৃত্যু।