জাতীয় নির্বাচন আসছে ডিসেম্বরের মধ্যেই হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বুধবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভায় ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন স্তরের সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অংশ নেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সভায় প্রথমে আধা ঘণ্টার বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান, এরপর আরও সোয়া ঘণ্টা ধরে তিনি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
জেনারেল ওয়াকার চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “আমি চাই, সেনাবাহিনী দ্রুত এই দায়িত্ব শেষ করে ব্যারাকে ফিরে যাক।” তিনি জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, “আমি মনে করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। জানুয়ারির শুরুতেই নতুন নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে—এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি।”
মানবিক করিডোর নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, “বিষয়টি স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। একমাত্র একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখানে জাতীয় স্বার্থ এবং ঐকমত্য অপরিহার্য।” এক অফিসারের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “There will be no corridor।”
বৈঠকে জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। কর্মকর্তারা প্রশ্ন তোলেন—সেনাবাহিনীর অবস্থান জানার সুযোগ কেন প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সেনাপ্রধান সরাসরি কিছু বলেননি।
আলোচনায় দেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার জানান, “কী সংস্কার হচ্ছে বা কিভাবে হচ্ছে সে বিষয়ে আমার কোনো তথ্য নেই। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”
চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। স্থানীয় মানুষ ও নেতৃবৃন্দের মতামত নেওয়াও জরুরি।”
পোশাক শিল্পের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় সভায়। একাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, “এই খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
গত নয় মাসে দেশে এক ধরনের ‘অভিভাবকত্বহীনতা’ বিরাজ করছে মন্তব্য করে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, “একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে সার্বিক পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে।”
তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী কখনো এমন কিছু করবে না যা দেশ ও জনগণের ক্ষতির কারণ হয়। অন্য কাউকেও এমন কিছু করতে দেওয়া হবে না।”
‘মব ভায়োলেন্স’ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “এখন থেকে এসব আর সহ্য করা হবে না।” আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জনগণ যাতে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেন তিনি।
শেষে তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি, এবং প্রয়োজন হলে আরও করব।”