ব্রাজিলিয়ান সিরি-এ লিগে রোববার রাতে একটি বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিলেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম আলোচিত তারকা নেইমার জুনিয়র। বোটাফোগোর বিপক্ষে ম্যাচের ৭৬তম মিনিটে হাত দিয়ে বল জালে পাঠানোর চেষ্টায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। ম্যাচের তখনও কোনও গোল হয়নি, তবে শেষদিকে অ্যাটাকার আর্থারের একমাত্র গোলে জয় নিশ্চিত করে বোটাফোগো।
এ ঘটনাটি কেবল একটি লাল কার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নেইমারের ক্যারিয়ারের আরেকটি নাটকীয় বাঁক। অনেকেই মনে করছেন, এটাই হতে পারে সান্তোসে তার দ্বিতীয় অধ্যায়ের শেষ ম্যাচ।
নেইমার ইনজুরি কাটিয়ে সম্প্রতি ফিরেছেন মাঠে। তবে তার প্রত্যাবর্তন হয়ে উঠলো আরও বিতর্কিত ও হতাশাজনক। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে একটি ফিরতি বল যখন বোটাফোগোর পেনাল্টি বক্সে ঘুরছিল, তখন সবার অপ্রত্যাশিতভাবে নেইমার তা হাতে ছুঁয়ে জালে পাঠান। যদিও তৎক্ষণাৎ রেফারি গোল বাতিল করেন, সঙ্গে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে তাকে লাল কার্ডে মাঠছাড়া করেন।
ঘটনার পরপরই বোটাফোগোর খেলোয়াড়রা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ঘিরে ধরেন। নেইমারও কিছুটা বিমর্ষ ও অসহায় ভঙ্গিতে মাঠ ছাড়েন। অথচ ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরে নিজেকে প্রমাণ করার এটাই ছিল তার বড় সুযোগ।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্টে নেইমার লেখেন:
"আমি একটি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আজ যদি আমি মাঠের বাইরে না যেতাম, তবে আমি নিশ্চিত দল তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তো। এই তিন পয়েন্ট তোমরা আমার বিরুদ্ধে লিখে রাখতে পারো।"
তার এই বার্তা থেকে অনুধাবন করা যায়, তিনি নিজের কর্মের দায়ভার স্বীকার করেছেন এবং ক্লাব ও সমর্থকদের প্রতি গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।
নেইমার জানুয়ারিতে সৌদি ক্লাব আল-হিলাল ছেড়ে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে আসেন। তার সঙ্গে সান্তোসের চুক্তি ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে এই লাল কার্ড ও সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কারণে ৬ জুন ফোরতালেজার বিপক্ষে সান্তোসের পরবর্তী ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন না।
এটা যদি চুক্তির শেষ ম্যাচ হয়ে থাকে, তাহলে এই লাল কার্ডই হতে পারে সান্তোসের জার্সিতে নেইমারের বিদায়ী মুহূর্ত।
এমন এক অবসান কল্পনাও করেননি সমর্থকরা—যেখানে তিনি হাত দিয়ে গোল করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
সান্তোস বর্তমানে লিগ টেবিলের ১৮তম স্থানে রয়েছে, ১১ ম্যাচে সাতটি পরাজয়ের পর। নেইমারের প্রত্যাবর্তন দলকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করলেও, পারফরম্যান্সে তেমন উন্নতি আসেনি। যদিও তার উপস্থিতি মাঠে ভিন্ন মাত্রা আনছিল, তবে ইনজুরি ও সাম্প্রতিক লাল কার্ড সবকিছু ম্লান করে দিয়েছে।
নেইমারকে ঘিরে সবসময়ই নাটক, প্রতিভা ও বিতর্ক সহাবস্থান করেছে। তবে এই ঘটনা তার ক্যারিয়ারের এক কঠিনতম ও বিভ্রান্তিকর মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। এক সময়ের বিশ্বের অন্যতম দামি ফুটবলার, যিনি বার্সেলোনা ও পিএসজির হয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন, তিনি এখন নিজের দেশেই ক্লাব ও জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে।
যদি সান্তোস তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করে, তবে নেইমারের সামনে হয়তো আরও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসবে—আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়? নতুন ক্লাব? নাকি ক্যারিয়ারের একান্ত অন্তিম অধ্যায়?
নেইমার ফুটবল বিশ্বের এক অম্ল-মধুর চরিত্র। তার প্রতিভা অনস্বীকার্য, তবে শৃঙ্খলা ও মনোসংযোগে ঘাটতি বারবার তাকে পেছনে টেনেছে। সান্তোসের হয়ে এই লাল কার্ড যদি তার বিদায়ী মুহূর্ত হয়ে থাকে, তবে সেটা হবে ব্যতিক্রমী এক কাব্যিক ট্র্যাজেডি—যেখানে এক কিংবদন্তির গল্প শেষ হয় এক ভুল সিদ্ধান্তে, এক নিষিদ্ধ মুহূর্তে।