আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাতিল করা হয়েছে। তবে ভোটার কিংবা প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে স্নাতক, মাস্টার্স অথবা এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত হতে হবে। সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না।
এমন সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহ না পেরোতেই গত ২২ জুন ফের এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে করে এক বছরে দুইবার এমফিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে মনে করছেন, এটি একটি বিশেষ ছাত্রসংগঠনের সুবিধার্থে পরিকল্পিত পদক্ষেপ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো এমফিল ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে সে সময় খুব কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়ায় আবারো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর একবারই এমফিল প্রোগ্রামের জন্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
জানুয়ারির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমফিল প্রোগ্রাম দুই বছর মেয়াদি হবে। প্রথম বর্ষে কোর্সওয়ার্ক এবং দ্বিতীয় বর্ষে থিসিস করতে হবে। ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ (পুনঃভর্তিসহ) সর্বোচ্চ তিন বছর নির্ধারিত থাকবে।
নতুন বিজ্ঞপ্তির আওতায় আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২২ জুন থেকে এবং চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত— অর্থাৎ আবেদন করার সুযোগ মাত্র ৮ দিন। আগ্রহী প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন করে তার অধীনে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাবির জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারী হামিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে মাস্টার্সের বিভিন্ন বিভাগের ফলাফল আটকে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি, একটি বিতর্কিত ছাত্রসংগঠনের এক ব্যক্তিকে সুবিধা দিতেই এমফিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘দুইটি বিজ্ঞপ্তিই একই শিক্ষাবর্ষের জন্য। আগের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন কম পড়েছিল বলেই নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এখানে পক্ষপাতিত্বের কোনো বিষয় নেই, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তবে প্রশ্ন উঠেছে, জানুয়ারিতে আবেদন কম পড়ার পর এত দীর্ঘ সময় পরে আবার কেন বিজ্ঞপ্তি? রেজিস্ট্রার স্বীকার করেছেন, বিজ্ঞপ্তি দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, ‘এটি নিয়মের মধ্যে থেকেই হয়েছে এবং এর সঙ্গে ডাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধুমাত্র পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীরাই এবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। যারা স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাবিতে ভর্তি হয়ে স্নাতক, মাস্টার্স অথবা এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত এবং আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত, শুধু তারাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সান্ধ্যকালীন, পেশাদার ও এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত এবং অধিভুক্ত/সংযুক্ত কলেজ-ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ডাকসুতে ভোটার বা প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারবেন না।
এই পরিস্থিতিতে এমফিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও ডাকসু নির্বাচনের সময়কাল ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সমালোচনা ও বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবি করলেও শিক্ষার্থীদের একাংশ এখনও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।