ভারত সরকার হঠাৎ করে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পোশাকসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে বেনাপোল বন্দরে গার্মেন্টস পণ্যবোঝাই ৩৬টি ট্রাক আটকা পড়ে আছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত এসেছে এক মাস আগে বাংলাদেশ কর্তৃক ভারতীয় সুতা আমদানিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) ১৭ মে একটি নির্দেশনায় জানায়, এই নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও গার্মেন্টস পণ্য এখন থেকে শুধু কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতকে প্রায় ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার। বছরে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের গার্মেন্টস রপ্তানি হয় ভারতে, যার ৯৩ শতাংশই যায় স্থলপথে। ফলে স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা এই খাতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, যেসব পণ্যের এলসি ও টিটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলো যেন ছাড় করা যায়, সে বিষয়ে কাস্টমসের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যত রপ্তানি বন্ধ করে দেবে। সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে সময় ও খরচ দুই-ই অনেক বেড়ে যায়, যা তাদের জন্য বাস্তবসম্মত নয়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, “স্থলপথে গার্মেন্টস পাঠাতে খরচ কম হতো, এখন সমুদ্র বা আকাশপথে পাঠাতে ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাবে।” সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, “বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। অধিকাংশ আমদানিকারক সহজ যোগাযোগের কারণে বেনাপোল ব্যবহার করেন।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, “আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল চিঠি পাইনি, তবে পত্রিকায় বিষয়টি দেখেছি। শনিবার পর্যন্ত সব ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, কিন্তু রোববার সকাল থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও গার্মেন্টস জাতীয় কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি।”
বর্তমানে পরিস্থিতি অনিশ্চিত, এবং দ্রুত সমাধান না হলে এ নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র:টিবিএস